ঢাকা মেট্রোরেল সম্পর্কে জানা অজানা নানান তথ্য

Table of Contents

ঢাকা মেট্রোরেল

আজকে কথা বলবো ঢাকা মেট্রোরেল সম্পর্কে, এবং জানবো মেট্রোরেল সম্পর্কে জানা অজানা নানান তথ্য।

চলুন তাহলে শুরু করা যাক মেট্রোরেল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। 

মেট্রো-রেল এর কথা চিন্তা করতেই সর্বপ্রথম মাথায় আসে যে প্রশ্ন তা হলো 

মেট্রো রেল কি? বা মেট্রোরেল কাকে বলে? চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক মেট্রোরেল কাকে বলে ?

মেট্রো রেল কি? বা মেট্রোরেল কাকে বলে? 

উত্তর:- আমরা মেট্রো বলতে বুঝি মেট্রোপলিটন বা নগরী। তাহলে মেট্রোরেল কে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাই “শহর বা সিটির অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যাবস্থাকে দ্রুত এবং নিরবিচ্ছিন্ন করার লক্ষে শহরে গণপরিবহনের আধুনিক রেল ব্যবস্থার নামই মেট্রোরেল” আর মেট্রো রেল চলাচলের ব্যাবস্থা সাধারণত উড়াল বা পাতাল রাস্তায় হয়ে থাকে। যাতে যাতায়াত ব্যাবস্থাকে দ্রুত এবং নিরবিচ্ছিন্ন করা যায়। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো মেট্রোরেল সবসময় শহর বা সিটির মধেই চলাচল করে থাকে।

পৃথিবীর প্রথম মেট্রো রেল সার্ভিস চালু হয়েছিল কোথায় ?

উত্তর:- পৃথিবীর প্রথম মেট্রো-রেল সার্ভিস চালু হয়েছিল ১৮৬৩ সালে ইংল্যান্ডে যা ছিল ইঞ্জিন চালিত মেট্রোরেল সেবা। পরবর্তীতে ১৮৯০ সালে ইঞ্জিন চালিত মেট্রোরেল এর পরিবর্তে ইলেক্টিক বৈদ্যুতিক লাইনের সাহায্যে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করে।  

পরবর্তী কালে পৃথিবীর বাংলাদেশ সহ অনেক দেশেই এখন আধুনিক রেল বা মেট্রোরেল পরিষেবা চালু করেছে। 

বাংলাদেশে প্রথম মেট্রো রেল চালু হয় কবে?

উত্তর:- বাংলাদেশে প্রথম মেট্রো-রেল চালু হয়েছিল ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে যা ছিল প্রথম পর্যায়ের ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট লাইন ৬ দিয়ে চলা দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। যা উদ্ভোদন করেন বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের ঢাকা মেট্রোরেল আর প্রথম যাত্রী। পরবর্তীতে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে। 

ঢাকা মেট্রোরেল এর চলাচল ?

ঢাকা মেট্রোরেল কোথায় হতে কোথায় পর্যন্ত যায় ?

উত্তর:- ঢাকা মেট্রোরেল হলো বাংলাদেশের সর্বপ্রথম মেট্রোরেল, ঢাকা মেট্রোরেল ঢাকা সিটিতে অবস্থিত। যা ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ জনসাধারণের উন্মুক্ত করা হয়। এমআরটি-৬ লাইনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে আগারগাঁও-মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন চলমান রয়েছে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে পারে বলে জানিয়েছেন MTR .

ঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশন কোথায় কোথায় ?

উত্তর:- বর্তমানে এ রুটের 17টি স্টেশন হয়েছে – উত্তরার মাঝে ৩টি স্টেশন ১. উত্তরা উত্তর, ২. উত্তরা সেন্টার, ৩. উত্তরা দক্ষিণ, মিরপুর এলাকায় ৫ টি স্টেশন পাবে যাত্রীরা তা হলো ১. পল্লবী, ২. মিরপুর ১১, ৩. মিরপুর ১০, ৪. কাজীপাড়া, ৫. শেওড়াপাড়া, তার পর ঢাকা মেট্রোরেল এর আরো স্টেশন পাবেন হলো আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়, মতিঝিল এবং কমলাপুর।

বর্তমানে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলমান রয়েছে এবং কমলাপুর পর্যন্ত চালু হবে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ।

MRT লাইন-6 কত লম্বা হবে?

ঢাকা মেট্রোরেল লাইনের দৈর্ঘ্য কত?

উত্তর:- MRT লাইন-6 বা ঢাকা মেট্রোরেল লাইনের দৈর্ঘ্য হলো ২১.২৬ কিলোমিটার যা মাইলে ১৩.২১ মাইল। এর মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ২০.১ কিলোমিটার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত।

ঢাকা মেট্রোরেল লাইনে বর্তমানে কতগুলো ট্রেন চলাচল করছে?

উত্তর:- এমআরটি লাইন ৬-এর রেলপথে বর্তমানে ১২টি ট্রেন চলমান রয়েছে। ঢাকা মেট্রোরেল এর ট্রেন জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম নামে একটি প্রতিষ্ঠান মেট্রোরেলের কোচগুলো তৈরি করেন। 

ঢাকা মেট্রোরেল দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কত ? বা মেট্রোরেল বিবরণী

উত্তর:- মেট্রোরেল এর ট্রেন গুলো জাপানিজ কোম্পানি কাওয়াসাকির তৈরি। ট্রেনের প্রতিটি কোচ লম্বায় হলো ১৯.৮ মিটার, প্রস্থে আছে ২.৯৫ মিটার ও উচ্চতায় ৪.১ মিটার। কোচগুলো একসাথে ট্রেনে পরিণত করা হলে দৈর্ঘ্যে ১২০ মিটার হয় থাকে। 

ঢাকা মেট্রোরেলের ভাড়া কত?

উত্তর:- প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৫ টাকা করে পূর্ণাঙ্গ তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে 

এবং সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। তার মানে মেট্রোরেলে চড়তে হলে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা গুনতে হবে।

উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ৬০ টাকা। 

দিয়াবাড়ি বা উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা, আবার উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা এবং উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা।

আর পল্লবী থেকে যদি মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ বা কাজীপাড়া স্টেশনের কোনো একটাই যান তাইলে আপনাকে ভাড়া ২০ টাকা গুনতে হবে। একুই ভাবে পল্লবী থেকে যদি শেওড়াপাড়া বা আগারগাঁও স্টেশনের যান তাইলে আপনাকে গুনতে হবে ৩০ টাকা। আবার মিরপুর-১০ নম্বর থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা তবে ফার্মগেট পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা। আবার একুই স্থান থেকে শাহবাগ বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেলে ভাড়া ৫০ টাকা কিন্তু যদি সচিবালয় বা মতিঝিল যান তবে আপনার ভাড়া হবে ৬০ টাকা। 

তবে যদি আপনি দীর্ঘমেয়াদী পাস নিতে চান তো ভাড়ায় ১০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। 

মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া ৫০ টাকা, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে যেতে লাগবে ৬০ টাকা। তবে মিরপুর-১০ থেকে কমলাপুর স্টেশনে যেতে লাগবে ৭০ টাকা ভাড়া।

তবে সবচেয়ে ভালো খবর হলো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনা ভাড়া এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা আছে।

ঢাকা মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া কত? 

উত্তর:- মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া হলো ৬০ টাকা। 

ঢাকা মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া এবং সর্বোচ্চ ভাড়া কত?

উত্তর:- মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ২০ টাকা এবং এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা।

জেনে রাখা দরকার: পরবর্তী সময় মেট্রোরেলের এর দৈর্ঘ্য বাড়লে সর্বোচ ভাড়া ও বাড়বে। 

মেট্রোরেলে যাতায়াতে শেষ সময় কত?

বর্তমানে সর্বসাধারণের জন্য স্বপ্নের মেট্রোরেল এক দিগন্তের নাম। আগে উত্তরা থেকে সচিবালয়, মতিঝিল যেতে সময় লাগত ২ঘণ্টা ৩০ মিনিটে থেকে ৩ ঘণ্টা। কিন্তু মেট্রোরেলের সুবাদে বর্তমানে উত্তরা থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটে মতিঝিল যাওয়া যায়। 

বর্তমানে যদি আপনার ম্যাস ট্রানজিট কার্ড থাকে তাইলে আপনি মেট্রোতে যাতায়াত করতে পারবেন রাত ৯টাই শেষ যাত্রা। আর যদি আপনার ম্যাস ট্রানজিট কার্ড না থাকে তাইলে আপনি মেট্রোতে যাতায়াত করতে পারবেন রাত ৮টা ২০মিনিটে শেষ যাত্রা। কারণ  রাত ৮টা ২০মিনিট পর্যন্ত আপনি আপনার যাত্রার টিকিট কাটতে পারবেন। তার পরে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটার সুব্যবস্থা থাকে না। তাই আপনাকে বিনা ম্যাস ট্রানজিট কার্ডে উক্ত সময়ের মধ্যেই যাত্রা করতে হবে।

আপনি যদি কম সময়ে আপনার যাত্রা করতে চান তাইলে আপনাকে ম্যাস ট্রানজিট কার্ড নিতে হবে। কারণ কখনও কখনও এমন হয় যে টিকিটের জন্য আপনাকে ২০মিনিটে থেকে ৩০ মিনিটে টিকেট কাউন্টারে টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হতে পারে। আর যদি আপনার কাছে ম্যাস ট্রানজিট কার্ড থাকে (পর্যাপ্ত ব্যালান্স সহ) তাইলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে যাত্রা করতে পারবেন। কারণ আপনার টিকেট আপনার কার্ড। 

 ঢাকা মেট্রোরেল ম্যাস ট্রানজিট কার্ডের জন্য ভিজিট করুণ  https://dmtcl.gov.bd/
 

ঢাকা মেট্রো রেল সম্পর্কে MCQ এখানে পাবেন।

মেট্রো রেল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)

নতুন খবর:

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা মেট্রোরেলের বেশ কিছু ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল। যার কারণে ঢাকা বাসি এই মেট্রোরেল সেবা থেকে বেশ কিছু দিন বঞ্চিতই ছিলো। মেট্রোরেলের স্টেশন ক্ষতি, নানান হামলার শঙ্কা, মেট্রো লাইন ক্ষতি এবং কর্মীদের নতুন আন্দোলন ইত্যাদি কারণ ছিলো বন্দের মূল ইস্যু। 

তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার দাবি করেছিল বিধ্বংস মেট্রোরেল চালু হতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের হল ধরেন ড. মুহাম্মদ উইনুস। ড. মুহাম্মদ উইনুসকে বাংলাদেশের হাল ধরতে এই গুরুতর দায়িত্ব দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল জনতা। ছাত্রদের এই অনুরোধকে ড. মুহাম্মদ উইনুস ফেলতে পারেনি। তাইতো সুদূর ফ্রান্স থেকে খুব তাড়াতাড়ি সকল কাজ ফেলে চলে আসেন। সারা দেন ছাত্রদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গোড়ার কাজে। 

যার ফলে শুরু হয় বাংলাদেশে নতুন দিগন্ত। শুরু হয় বাংলার নতুন অধ্যায়। এই অধায়কে বাংলাদেশের আপমা জনও সাধারণ এবং ছাত্র সমাজ নাম দেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ২.০। কারন্ট ১৯৭১ সালে দেশ যে স্বাধীনতা পায় তা ছিলো স্বাধীনতা ১.০। ২০২৪ সালে স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে দেশে সকল শ্রেণির মানুষ ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতা ২.০।

বর্তমান ড. মুহাম্মদ উইনুস সরকার মাত্র ১ মাসের মাথায় ঢাকা মেট্রোরেলকে সচল করেছেন। দেশের মানুষকে বুঝিয়েছেন যে আগের সরকার স্বৈরাচারী ছিলো। দুর্নীতিবাজ ছিলো, ছিলো মিথ্যাচার। 

মিরপুর ১০ মেট্রোরেল স্টেশন কবে খুলবে?

ড. মুহাম্মদ উইনুস সরকারের কাজের ধরনে মানুষ মুগ্ধ হচ্ছে। ৫ই আগস্ট বিদায়কৃত শেখ হাসিনা সরকার বলেছিলো মেট্রোরেল ঠিক হতে সময় লাগবে কমপক্ষে ১ বছর। এবং এর খরচ ধরা হয়েছিল ৩ শত ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু ড. মুহাম্মদ উইনুস সরকার প্রথমত মেট্রোকে চালু করেছে মাত্র ১ মাসের কম সময়ে। দ্বিতীয়ত মোট ৫০ কোটি খরচ হবে বলে ধারণা করা হয়েছে। 

মিরপুর ১০ নং মেট্রোরেল স্টেশন আগামী অক্টোবর মাসেই চালু হবে বলে জানিয়েছেন MRT কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে জানিয়েছেন কাজীপাড়া মেট্রোস্টেশন ও চালু হবে আগামী মাসেই।

ঢাকা মেট্রোরেল কমলাপুর স্টেশন

এবং আগামী বছর ২০২৫ সালে মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। সকল যাত্রী সাধারনের আগে কমলাপুর যেতে আবদুল্লাপুর থেকে সময় লাগত ৩ ঘন্টা থেকে ৪ ঘণ্টা। বর্তমানে মেট্রোরেলের মাধ্যমে সময় লাগবে মাত্র ৫০ মিনিটে থেকে ১ ঘণ্টা। এই মেট্রোরেল প্রকল্পে পরবর্তী সময় আবদুল্লাপুর পর্যন্ত স্টেশন বর্ধিত করা হবে বলে জানা গিয়েছে। 

This Post Has One Comment

Leave a Reply