আতঙ্কের আরেক নাম রাসেল ভাইপার (Russell’s viper)

রাসেল ভাইপার

রাসেল ভাইপার (Russell’s viper) সাপ যাকে বাংলাদেশের মানুষ চেনেন চন্দ্রবোড়া নামে। রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া একটি বিষাক্ত সাপ। বাংলাদেশের বিষাক্ত বা বিষধর ৪টি সাপের তালিকাই স্থান করে নিয়েছে রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ।

চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপ কী কেন

রাসেল-ভাইপার সাপটি নিয়ে স্কটিশ প্রকৃতিবিদ (প্রকৃতি গবেষক) প্যাট্রিক রাসেলে গবেষণা করেন। এবং প্যাট্রিক রাসেলের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে রাসেল-ভাইপার, বাংলাদেশে এই সাপ চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত।

চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপারের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Daboia russelii. চন্দ্রবোড়া এই সাপ সকল সাপের চেয়ে একটু আলাদা, প্রায় সব সাপ জন মানব এড়িয়ে নিজেকে আগলে রাখে। সেখানে চন্দ্রবোড়া একটু বেশি আলাদা কারণ, এই সাপ মানুষ থেকে দূরে থাকে না বরং মানুষের খুব কাছে কাছে থাকে। এবং খুব কর্কোর্ট স্বভাব এর হয়। আর ভীষণ আক্রমণাক্তক হয়ে থাকে। এই সাপের বিষ খুবই শক্তিশালী এবং তীব্র যা মানুষের জন্য খুব মারাত্মক হতে পারে। রাসেল ভাইপারের কামড়ে প্রচুর ব্যথা, ফুলে যাওয়া, রক্তপাত এবং কখনও কখনও মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। রাসেল-ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া প্রধান খাদ্য হলো মাংসাশী, ইঁদুর, খাচড়, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, ছোট পাখি, ব্যাঙ, এবং অন্যান্য ছোট প্রাণী।

চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপের প্রাপ্তি স্থান 

Daboia russelii বা চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপারের প্রধান আবাসস্থল হিসাবে ধরা হয় ভারতীয় উপমহাদেশকে। কারণ এই বিষাক্ত বা বিষধর  চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার ভারতীয় উপমহাদেশে বেশি দেখা যায়। এছাড়াও রাসেল ভাইপার সাপ বিশ্বের মায়ানমার, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল এবং পাকিস্তান সহ এখন অনেক দেশেই দেখা যায়। 

চন্দ্রবোড়া বা রাসেল-ভাইপার এখন বাংলাদেশে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি সহ প্রায় সব জেলায় দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এবং চর অঞ্চল বা নদী এলাকায়।

বসবাস 

এরা সাধারণত শুষ্ক জায়গা, খোলা বনভূমি বা বনাঞ্চল, গ্রাম্য এলাকা খোলা পরিবেশ, চাষের জমি (আবাদি জমি বা ক্ষেত) কৃষিজমি, বন, ঝোপঝাড় এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করে থাকে (আগেই বলা হয়েছে আর মানুষের খুব কাছে বসবাস করতে পছন্দ করে) এবং পাথর নিচে, গাছের তলায়, এবং আবাদি অনাবাদী খেত, খড়ের গাদা বা শুকনো স্তুপে বেশি থাকে।

বিলপ্ত থেকে শনাক্ত রাসেল ভাইপার

কয়েক বছর আগে রাসেল ভাইপার সাপকে বাংলাদেশে বিলপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু গত কয়দিন হলো রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এখন চন্দ্রবোড়া পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ইতাদি নদী এলাকায় খুব বেশি দেখা যাচ্ছে এবং আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে চন্দ্রবোড়া। 

এখন সবার মাঝে একটায় প্রশ্ন বিলুপ্ত হওয়া চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার আবার এলো কিভাবে। এই প্রশ্নের একটায় উত্তর হতে পারে, হয়তো কোথায় এই সাপ তার বংশ লুকিয়ে রেখেছিল তাই তা জেগে উঠেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে চন্দ্রবোড়া এক সাথে ৫০ থেকে ৮০ টি পর্যন্ত বাচ্চা দিতে সক্ষম।

বৈশিষ্ট্য বা চেনার উপায় কী?

  • গঠন: চন্দ্রবোড়া বা রাসেল-ভাইপার লম্বায় সাধারণত ১.২ মিটার থেকে ১.৬ মিটার অর্থাৎ ৪ ফুট থেকে ৫.৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • রঙ: চন্দ্রবোড়া বা রাসেল-ভাইপার এর গায়ের রং সাধারণত বাদামি বা হলদে বা জলপাই রঙের হয়ে থাকে। এবং বাদামি বা হলদে রঙের উপরে গাঢ় বাদামি এবং কালচে গোলাকার চোপ থাকে। এবং মাথা বা ঘাড়ে ত্রিভুজ আকৃতির স্পষ্ট ভাবে পৃথক করে মতো থাকে এবং মাথা চ্যাপ্টা হয়ে থাকে। চন্দ্রবোড়া জলে এবং স্থলে উভয় স্থানে বসবাস করে থাকে। এদের লেজ সাধারণত ছোট এবং সাদা টিপযুক্ত।

আচরণ দেখে চেনার উপায়

চন্দ্রবোড়া বাংলাদেশের ৪টি বিষাক্ত সাপের তালিকায় একটি। আর ধীরগতি (একে বারে ধীরগতি সম্পূর্ণ নয়) সম্পূর্ণ হলেও খুব আক্রমণাত্মক প্রজাতি। বিশেষ করে বিপদে পড়লে বা কেও উত্যক্ত করলে খুব বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

 

সাধারণ জ্ঞান, সকল আপডেট সংবাদ পেটে ক্লিক করুণ ছোট সংবাদ 

 

রাসেল ভাইপার ডিম দেয়?

রাসেল ভাইপার নামের এই সাপ ডিম দেয় না, এরা বাচ্চা প্রসব করে থাকে। এরা একবারে ৫০ থেকে ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করে থাকে (তবে বেশির ভাগ ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়)।

রাসেল ভাইপার কেন বিষাক্ত

আগেই বলা হয়েছে এই সাপ খুব বিষাক্ত এর কামড়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।

  • এই সাপের বিষ হেমোটক্সিন, খুব সহজে রক্তে বিষ প্রবেশ করিয়ে ক্ষতি করতে পারে।
  • সাপের কাটা স্থানে ফুলে যায় এবং ফোলাভাব হয়, ব্যথা, রক্তক্ষরণ।
  • যে কারণে মানুষের মৃত্যু হয়, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরনের কারণে রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং কিডনি বিকল হয়।
  • এদেড় কামড়ে বিষ পুরো শরীরে ছড়িয়ে অঙ্গহানি, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া।

রাসেল-ভাইপার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় কিভাবে 

  • এই সাপ বেশির ভাগ রাতের বেলায় সক্রিয় থাকে। তাই রাতে কোথাও বেড়োল সাউন্ড বা শব্দ করতে হবে। ঝোপঝাড় এড়িয়ে চলতে হবে।
  • এরা যেহেতু শুষ্ক জায়গা, খোলা বনভূমি বা বনাঞ্চল, কৃষিজমি বা ক্ষেত, ঝোপঝাড় এবং পাথর নিচে, গাছের তলায়, এবং, খড়ের গাদা বা শুকনো স্তুপে বেশি থাকে তাই এসব জায়গায় সাবধানে বিচরণ করা।
  • বিশেষ করে রাতে যখন চলাচল করবেন একা না চলা।
  • যেকোনো সাপ দেখা গেলে মোটেও বিরক্ত না করা। কারণ এদের বিরক্ত করলে এরা আরও ভয়াবহ হয়।

এদের কামড়ে চিকিৎসা 

মনে রাখবেন এই সাপের বিষ খুব তীব্র তাই অবহেলা করা যাবেনা। অবশ্য এসাপের কামড়ে খুব দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে না হলে মৃত্যু ঝুঁকি আছে।

তবে সঠিক সময় এন্টিভেনম এবং চিকিৎসা নিলে মৃত্যু আড়ানো সম্ভব। 

বি: দ্র: খুশির কথা হলো এই যে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্দেশে এখন দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে এর চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 আপনার জেনে খুশি হবেন যে যদি কেও রাসেল-ভাইপার সাপ ধরিয়ে দেয় তবে তাকে বাংলাদেশি টাকায় ৫০ হাজার উপহার দেয়া হবে। একথা শুনে তো একজন কৃষক এক জীবিত রাসেল-ভাইপার ধরে হাজির।

আপনিও হতে পারেন পুরস্কারের একজন। 

সাপ পোকামাকড় যতই বিষাক্ত হোক না কেন। তাও এসব মেরে ফেলা উচিৎ নয়। এসব প্রতিটি দেশের জাতীয় সম্পদ তাই জনমানবের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে হয়তো চিড়িয়াখানায় সংরক্ষণ করা যেতে পরে। 

Leave a Reply