সিকিমে ভাঙল বাঁধ ১১ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি

বন্যার পরিস্থিতি

সিকিমে ভাঙল বাঁধ ১১ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি

বন্যায় ভালো নেই বাংলাদেশ, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা।

 ভারত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ। পার্শবর্তী দেশ হিসাবে সব দেশ তার প্রতিবেশী দেশকে অনেক কিছু দিয়ে নিয়ে সাহায্য করে থাকে। এবং এটা করতে বাধ্য থাকতে হয় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী। সেটা হতে পারে শুল্ক মুক্ত বাণিজ্য বা শুল্ক যুক্ত বাণিজ্য। হোক ভোগোলিক সীমানা আইন কিংবা প্রতিটি দেশের সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি। আমাদের দেশ একটি শান্তি সমৃদ্ধির দেশ বাংলাদেশ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সব সময় বাংলাদেশ থেকে উপকার নিয়ে থাকে। যেমন প্রতি বছর টনকে টন ইলিশ মাছ নিয়ে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে থাকেন। সেটা বড় কথা নয়, মূল কথা হলো যে ইলিশ মাছ ভারতে পাঠানো হলেও। চাওয়া শর্তেও বাংলাদেশকে একটুও তিস্তার পানি পাঠান না। যার ফলে তিস্তা পাড়ের কৃষকরা ঠিক মতো চাষাবাদ করতে পারে না। 

ইন্ডিয়ায় ইলিশের দাম কত 

যে পণ্য যে দেশে উৎপন্ন হয় সাধারণত সেই দেশে ওই পণ্যের দাম কম থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ ইলিশের উৎপাদক দেশ হলেও। বাংলাদেশে যে ইলিশের দাম কেজি প্রতি ১৭০০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকা। সেই ইলিশ মাছ ভারতীয়রা খায় মাত্র ৬০০- ৮০০ টাকায়। কারণ বাংলাদেশ ভারতে প্রতি বছর হাজার হাজার টন ইলিশ পাঠায়। যার ফলে দেশের বাজারে দেশের মানুষের জন্য ইলিশের টান পড়ে যায়। যার ফলে প্রতি বছর দেশের মানুষ অনেক চড়া দামে ইলিশ কিনে থাকেন, কিনতে হয়।

এটাতো গেলো শুধু মাত্র একটা ইস্যু। এরকম হাজার হাজার সুবিধা আছে যা ভারত বাংলাদেশ থেকে নিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের প্রধান এবং মূল চাওয়া তিস্তা পানি সঠিক বণ্টন। সেটার কথা কখনও ভারত ভাবেও না। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদিও বিষয়টা আমলে নিয়েছিল। কিন্তু উত্তর বঙ্গের সরকার তা নাখোঁজ করে দিয়েছেন কোন পানি দিতে পারবে না। আগের তার প্রদেশ বাঁচবে তার পর যদি কিছু থাকে তাইলে হয়তো চিন্তা করবে। 

যার ফলে বাংলাদেশের অনেক মানুষ বলে ভারত একটা সুবিধাবাধী দেশ। নিজের বেলায় ১০০ কিন্তু অন্যের বেলায় আগে বাঁচবে তার পর অন্যের কথা চিন্তা করবো।

ভারতের দাবি

বাংলাদেশের কিছু মানুষ যদিও দাবি করেছে বর্তমান বন্যায় দায়ী ভারত। কিন্তু ভারত বলছে অন্য কথা, তারা ইচ্ছে করে কিছুই করেনি। 

ভারতের মতে বাংলাদেশের বন্যা এবং ক্ষতির কারণ

অধিক বৃষ্টিপাত এবং মৌসুমী বৃটি মূল কারণ। ভারত বলছে অধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে যা ছিলো রেকর্ড সংখ্যাক। যার কারণে নদীগুলো দ্রুত পূর্ণ হয়ে যায়। এবং সিকিমের ভূমিধসের কারণে ওই অঞ্চলের জলবিদুৎ কেন্দ্র এবং নদী বাঁধ ক্ষতি গ্রস্থ হয়। যাতে পরিস্থিতি ভয়াবহতায় রূপ না নেয় তার জন্য নদীর বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। যার ফলাফল বর্তমান বন্যা। এতে ভারতের কোন রাজনৈতিক স্বার্থ নেই এবং কোন উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের বলে সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে বিপর্যস্ত হয়েছে। 

বন্যা পরিস্থিতি

গত কয়দিন হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলদেশে প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা হয়। কিন্তু এবার কার বন্যা আগের সকল বন্যার চেয়ে অনেক বড় আকার ধারণ করেছে। বন্যার প্রকোবে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, হবিগঞ্জ সহ দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের প্রায় ১১ টি জেলায় প্লাবিত হয়েছে। 

কথা হলো বন্যা তো প্রতি বছরই হয় তাইলে এই বছরের বন্যা নিয়ে এত কথা কেন?

কথা কিন্তু ঠিক বলেছেন। ভারত থেকে আশা পানি হতে বন্যা প্রতিবছরই হয় কিন্তু এখন এর বন্যার রূপ বগত বন্যার চেয়ে আলাদা। আর ভয়াবহতাও আগের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে ভারতের হিংসাক্ত রাজনৈতিক মনোভাব। একতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানের ভারতে অবস্থান করছে। তার পর ভারত ঠিক সকল সুবিধা পাচ্ছে না বলে এদেশের মানুষের ভাবনা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনা এখন আশ্রয় নিয়েছেন পাশের দেশ ভারতে। দেশের মানুষ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তির মনে করছেন শেখ হাসিনা এখন দেশের মানুষের ভালো চাই না। তাই ভারতের সাথে হাত মিলিয়ে এদেশের সকল সুবিধা হাসিল করতে চাই। 

বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বন্যা একরাতে সৃষ্ট ভারতের পানিতে। ভারত যখন তিস্তা নদীর গেট খুলে দেয় তখন ছিলো রাত ৮টা। কোন পূর্ব ঘোষিত সংবাদ ছাড়াই ভারতের তিস্তা কর্তৃপক্ষ এই কাজ করেছেন। যার ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণের প্রায় ১১ জেলায় প্লাবিত হয়। এবং এখন পর্যন্ত শিশু বয়স্ক সহ প্রায় ৩৫ জনের মৃত সংবাদ পাওয়া যায়। পানি বন্দি ছিলো প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষ। যার মধ্যে ছিলো শিশু, কিশোর, সহ বৃদ্ধ। নষ্ট হয়েছে লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল এবং ঘর বাড়ি সহ কাঁচামাল। বর্ণার্থীদের মতে কেও কোন কিছু নিরাপদ স্থানে সরাতে পারেনি। আকস্মিক বন্যার কারণে তারা এক পোশাকেই পানিতে হবু ডুবু খাচ্ছে। 

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি 

২০২৪ সালের বন্যাটা আকস্মিক এবং পরিকল্পিত ছিল বলে সবাই ধারণা করছেন। কেন নয় ভারত জানত যে তাদের এই তিস্তা নদীর গেট গুলো খুলে দিলে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হবে। সব বুঝেও ভারত তিস্তা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে সতর্ক বার্তা প্রদান করেনি। বরং এক রাতেই তিস্তার সকল গেট খুলে দেয়। যার ফলে নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমির ফসল। নষ্ট হয়েছে শত শত খামারির কষ্টে লালিত স্বপ্নের, গরু ছাগল এবং মুরগির খামার। নষ্ট হয়েছে স্বপ্নে গড়া হেক্টর হেক্টর মাছের খামার। 

মিডিয়ার সুবাদে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের সকল মানুষ দেখেছে বর্ণার্থদের আহাজারি। এই শেষ আমার সব শেষ। গেলো জলে সব ভেসে ভেলো। আমি তো সর্ব শান্ত হয়ে গেলাম ইত্যাদি ছিল তাদের মুখে। দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল প্রায় ৩ হাজার স্কুল কলেজ বর্তমানের বন্দ রয়েছে বন্যার বেগতিক পরিস্থিতির কারণে। সবচেয়ে বড় কথা হলো মানুষের এখন প্রাথমিক চাহিদা হিসাবে যে বিদ্যুৎ আর ইন্টারনেট ধরা হয়। সেই বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট বন্দ রয়েছে সেই সব অঞ্চলে। 

বেশি ক্ষতি হয়েছে যে সেক্টরে

আমরা ইতিমধ্যে জানি যে বর্তমান বন্যায় প্রায় ৩৫ জন মৃত্যু বরণ করেছে। সেই সাথে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ ঘর বাড়ি হারা। বন্যা পরিস্থিতি শিথিল হলে সবাইকে তাদের ঘর বাড়ি পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। আবার কারো তো বাড়ি ঘরের কোন চিহ্নই নাই। পানির প্রবল স্রোতে সব ধ্বংসে পরিণত হয়েছে।

বন্যায় কৃষকের জমিতে পলি মাটি পরে যার ফলে বন্যা পরবর্তী সময় ওই জমিতে ফসল ভালো হয় এবং খুব সহজে চাষ যোগ্য হয়। কিন্তু বন্যায় আগে কৃষক কে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলাতে হয়েছে সেটা আর ঘরে তোলা হয়নি। পাকা ফসল কাঁচা ফসল সব সব নষ্ট হয়ে গেছে এই আকস্মিক বন্যার পানিতে। 

হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে এই বন্যায়। কেও গরুর খামার করেছে। আবার কেও ছাগলের খামার করেছে। কেও করেছে মুরগির খামার এবং মাছ চাষ করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। যারা সব বেশির ভাগই ছিলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। সব বন্যার পানিতে হারিয়ে এখন সবাই পাগল প্রায়।

বন্যার ফলে প্রতিবছর কোন বেশি স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু এই বন্যা আগের তুলনায় ব্যাপক তাই এই বন্যার ফলে স্বাস্থ্যের সমস্যা বেড়েছে অনেক গুণ। যেমন বন্যা পরবর্তী সময় এবং বন্যা চলতি সময় জলবাহিত রোগের সংক্রমণ এর প্রবণতা বৃদ্ধি। প্রায় সবার ঘর বাড়ি ধ্বংস হয়েছে তাই স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুরো পুরী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা বন্যা পরবর্তী সময় এবং বন্যা কালীন সময় আরও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে এবং করবে।

শুধু যে বন্যা প্রবল এলাকা গুলোতে কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে তা নয়। সেখানে পানির স্রোত এত প্রকোপ ছিলো যে সকল পিচ ঢালা রাস্তা এখন মাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে। যা উক্ত অঞ্চলের ক্ষতি তথা পুরু দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি।

পরিত্রাণে বাংলাদেশ 

বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি থেকে আমরা একসাথে পরিত্রাণ পেতে পারি। তাই হয়তো বন্যায় সাহায্যকারি হিসাবে ছিলো বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র। এবং ছিলো সাধারণ ছাত্র, সাধারণ জনতা, বিভিন্ন সাহায্যকারি সংস্থা যেমন আস-সুন্না ফাউন্ডেশন। বাদ যায়নি বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা ইত্যাদি সহ এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ। যে যেমন পেরেছে সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।


বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চোখ রাখুন BCS Prepare এ। এখানে পাবেন বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আপডেট খবর। এবং থাকবে ছোট খবর বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি এবং পরিত্রাণের উপাই ইত্যাদি।

Leave a Reply