পদ্মা সেতু সম্পর্কে যাবতীয় প্রশ্ন এবং উত্তর
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের এক সাফল্যের নাম এবং আমাদের গৌরবের নাম। এই সেতু বাংলাদেশের তথা এশিয়ার মধ্যে দীর্ঘতম সেতু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পদ্মা ব্রিজ বাংলাদেশের প্রাণ কেন্দ্র ঢাকার সাথে খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মাগুরা, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ফরিদপুর, মাদারীপুর এবং রাজবাড়ী যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ থেকে সহজতর করেছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে করেছেন শক্তিশালী। এই ব্রিজের মাধমে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম মানুষের স্বপ্ন তথা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন অর্জিত হয়েছে।
BCS Prepare এর তথ্য পর্বে থাকছে পদ্মা ব্রিজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
পদ্মা বহুমখী সেতু/ পদ্মা সেতু বা পদ্মা ব্রিজ কোথায় অবস্থিত
উত্তর: পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের সুবিশাল পদ্মা নদীর উপরে নির্মিত ঢাকা থেকে চিন্তা করলে এপারে মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া প্রান্তে অবস্থিত এবং ওপার শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জাজিরা প্রান্তে অবস্থিত। এই সেতুটি মাওয়া প্রান্তর এবং জাজিরা প্রান্তরকে একত্রিতর মাধমে বাংলাদেশের উত্তর এবং দক্ষিণ অঞ্চলকে মিলিত করেছেন।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ কত?
পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের তথা এশিয়ার মধ্যে দীর্ঘতম বহুমখী সেতু। এর আগে বাংলাদেশের সর্বৃহতম সেতু ছিলো যমুনা বহুমুখী সেতু বা বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু।
এখন আমাদের সর্ববৃহতম সেতু হলো পদ্মা বহুমুখী সেতু। কারণ,
পদ্মা বহুমুখী সেতুর দৈর্ঘ্য হলো দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার (মূল কাঠামো) এবং এর
প্রস্থ হলো ১৮.১০ মিটার।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় কবে?
পদ্মা নদীর নাম শুনলেই এক ভয়ানক কিছু বলে মনে হয়। কারণ এই পদ্মা নদীকে সবাই সর্বনাশা হিসাবে চেনে। কারণ এই নদীর দু-পাড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ জমি, ভিটা-মাটি এবং ঘর-বাড়ি হার। এই নদীর দু-পাড়ের মানুষের একটা স্বপ্ন ছিলো এই পদ্মা ব্রিজ। আর তারই আঙ্গিকে বাংলাদেশ সরকার কাজ শুরু করেন।
আর যার ফলশ্রুতিতে পদ্মা-সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২৬শে নভেম্বর ২০১৪ সালে।
নদী সর্বনাশা এবং খুব বিপদ জনক বলে এই সেতু নির্মাণ করা খুব কঠিন ছিলো।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ কবে শেষ হয় বা পদ্মা-সেতু কবে উদ্ভোধন করা হয়?
পদ্মা-সেতু একটি স্বপ্ন এর এক অন্যন্য নাম। মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তর সহ অন্তত ১৫টি জেলার মানুষের খুশির নাম এই সেতু। এই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২৬শে নভেম্বর ২০১৪ সালে এবং হাজারো বাধা উপেক্ষা করে এর কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের জুন মাসে যার বদুলতে ২০২২ সালের ২৫শে জুন উদ্ভোধন করা হয়।
উদ্ভোধনের দিনে দু-পাড়ের মানুষের খুশি দেখার মতো ছিলো।
এবং আর সমাপনী অনুষ্ঠান শেষ হয় ০৫ জুলাই ২০২৪ সালে। যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যয় কত?
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প এর ব্যয় প্রথমে অনেক কম ধরা হয়। হয়তো প্রথমে প্রকল্প প্রণেতারা এই প্রকল্পকে সহজ একটা প্রকল্প ভেবেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে হয় তার উল্টোটা। যার কারণে প্রথমে (পদ্মা ব্রিজের) মূল সেতুর ব্যয় ধরা হয় ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। এবং মোট ব্যয় ধরা হয় ১২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা প্রায়। পরবর্তীতে প্রথম ধাপে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয় ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লক্ষ ৯০ হাজার ৫৮০ টাকা। যার কারণে তখন প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। তবে এতেও কাজ শেষ করতে পারে নি ঠিকাদার কোম্পানি। কারণ এই প্রকল্পে নদী শাসন ছিল খুব কঠিন একটা কাজ এবং মূল কাজ। যার ফলে আবার বাড়ানো হয় প্রকল্পের ব্যয়। ধাপে ধাপে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা প্রায়।
পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে কী কী চলতে পারে?
পদ্মা বহুমুখী সেতু একটি বহুমুখী সেতু চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সংক্ষেপে MBEC এই ব্রিজ টাকে এমন ভাবে নির্মাণ করেন যে একসাথে সড়ক পথের যানবাহন এবং রেলপথের রেল চলাচল করতে পারবে। সবার উপরে চলে সড়ক পথের যানবাহন যেমন বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভট কার (৪ চাকার যান) ইতাদি ইতাদি। এবং তার নিচে চলে রেল এবং নিচে নদী পথে চলে হাজারো নৌযান।
এক কোথায় সড়ক যান এবং রেল পথ উভয় চলাচল করতে পারে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ করেন কোন প্রতিষ্ঠান?
এই প্রকল্পের জন্য জাপান, চাইনা সহ বেশ কয়টি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান কাজের আগ্রহী হয়। সকল কিছু বিবেচনা করে চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সংক্ষেপে যাকে বলা হয় MBEC কে এই প্রকল্প নির্মাণের ১৭ জুন ২০১৪ সালে দায়িত্ব দেন বাংলাদেশ সরকার। চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (MBEC) কোম্পানির অনেক সুনাম আছেন বড় বড় নির্মাণে।
পদ্মা নদীর উপরে নির্মিত সেতুর স্প্যাম সংখ্যা কত?
৪ লেন বিশিষ্ট সড়ক যানের এবং একক লেনের রেল পথের ৬.১৫ কিলোমিটার এই পদ্মা ব্রিজের মোট স্প্যাম সংখ্যা ৪১ টি। এবং মোট পিলার স্থাপন করা হয়েছে ৪২টি এখানে প্রতিটি পিলারের পাইলিং করা হয়েছে ৬টি করে তবে বেশ কিছু জটিলতার কারণে ২২টি পিলারের পাইলিং করা হয়েছে ৭টি করে। এখানে মূল জটিলতা ছিলো মাটি।
পদ্মা সেতুর মূল নকশাকার কে? বা পদ্মা ব্রিজের ডিজাইনার কে?
পদ্মা সেতু ডিজাইনার বা নকশাকার হলেন এইসিওএম। এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হলেন চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লি:
বি: দ্র: পদ্মা সেতুর নকশা বা ডিজাইন অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না বাংলাদেশ সেতু বিভাগ এর বিনা অনুমতি ছাড়া।
পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কে?
২০০১ সালে তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
পদ্মা সেতুর উদ্ভোধন করেন কে?
২০২২ সালের ২৫শে জুন বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ভোধন করেন।
পদ্মা সেতুর টোল কত?
সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর জন্য ইতিপূর্বে টোল নির্ধারণ করেছেন। এখানে ফেরি ভাড়ার চেয়ে একটু বেশি টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। সেতু টোল একটু বেশি হলেও নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন।
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল এর টোল
মোটরসাইকেল টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা কিন্তু আপনি যদি ফেরিতে যেতে চান তাইলে মোটরসাইকেল এর ভেরি ভাড়া লাগবে ৭০ টাকা।
পদ্মা সেতুতে কার/জিপ গাড়ির টোল
কার বা জিপ গাড়ি জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫০ টাকা যেখানে ফেরি ভাড়া ৫০০ টাকা।
পদ্মা সেতুতে পিকআপ এর টোল
পিকআপ এর টোল ধার্য করেছেন মাত্র ১২০০ টাকা। অন্য দিকে পিকআপ এর ফেরি ভাড়া ৮০০ টাকা।
পদ্মা সেতুতে মাইক্রোবাসের টোল
পদ্মা সেতুতে মাইক্রোবাস এর টোল বসানো হয়েছে ১৩০০ টাকা অন্য দিকে ফেরিতে মাইক্রোবাস যেতে পারবে মাত্র ৮৬০ টাকা।
পদ্মা সেতুতে ছোট বাসের টোল
ছোট বাসের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১৪০০ টাকা কিন্তু ছোট বাসের ফেরি ভাড়া আছে মাত্র ৯৫০ টাকা।
পদ্মা সেতুতে বাসের টোল
মাঝারি আকারের বাস এর টোল সেতুতে ২০০০টাকা এবং ফেরিতে ভাড়া ১৩৫০ টাকা অন্য দিকে বড় বাসের সেতুর টোল ২৪০০ টাকা এবং যদি ফেরিতে যান তাইলে ফেরি ভাড়া ১৫৮০ টাকা।
পদ্মা সেতুতে ট্রাকের টোল কত?
ছোট ট্রাকের টোল ১৬০০ টাকা যদি ট্রাকের ওজন ৫ টন পর্যন্ত হয় (ছোট ট্রাকের ফেরি ভাড়া ১০৮০ টাকা)। আবার মাঝারি ট্রাকের টোল ২১০০ টাকা যদি ওজন ৫টন থেকে ৮ টন পর্যন্ত হয় (এ ট্রাকের জন্য ফেরি ভাড়া ১৪০০ টাকা)
আবার ট্রাকের ওজন যদি ৮ টন থেকে ১১ টন হয় তাইলে সেতুর টোল দাড়াবে ২৮০০ টাকায় এবং যদি ফেরিতে যান তাহলে গুণতে হবে ১৮৫০ টাকা। অন্য দিকে ট্রাকের সাইজ যদি ৩ এক্সেল পর্যন্ত হয় তাইলে টোলের জন্য গুণতে হবে ৫৫০০ টাকা এবং ফেরিতে গুণতে হবে ৩৯৪০ টাকা।
পদ্মা সেতুতে প্রতিদিন কত যানবাহন চলাচল করে?
পদ্মা সেতু এক উন্মুক্ত দার হিসাবে এখন বিবেচিত উত্তর এবং দক্ষিণ প্রান্তের মানুষের কাছে। এই সেতুর মাধমে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য সহ যাতায়াতে ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজারো ও বেশি যানবাহন যাতায়াত করে এই সেতুতে।