কোটা আন্দোলন বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিটা অনেক পুরনো। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের কোটা পদ্ধতি চালু হয়। যার সুবাদে ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা ছিলো ৮০ শতাংশ এবং সকল মেধাবীর লড়তো ২০ শতাংশ কোটা নিয়ে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তা বেড়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এ এখন ৪৪ শতাংশ মেধা কোটা বাকি ৫৬ শতাংশ অন্যনা কোটা।চলুন জেনে আশি BCS এর কোটা সঠিক বণ্টন।
BCS পরীক্ষা কোটা বিন্যাস
BCS এ মুক্তিযোদ্ধা কোটা
বাংলাদেশ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয় মুক্তিযুদ্ধের মাধমে অর্জন করে স্বাধীনতা। এই মহান মুক্তিযুদ্ধে মহান শহিদের এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা দের সকল সম্মানের কথা চিন্তা করে যুদ্ধ পরবর্তী কালে এদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা করা হয়। যা ছিলো
BCS এ মুক্তিযোদ্ধা কোটা – ৩০ শতাংশ (মূল কোটার ১০০ ভাগের ৩০ ভাগ)।
১৯৭২ সাল থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে এই কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং পরে পরবর্তী প্রজন্মদের (মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনীদের) জন্য রাখা হয়।
BCS এ নারী কোটা
বাংলাদেশের সরকার এবং বিভিন্ন সন্থা নারী উন্নয়ন এবং অগ্রগতির জন্য নারী অগ্রাধিকার কোটা রাখা হয়।
নারী অগ্রাধিকার কোটা – ১০ শতাংশ।
BCS এ জেলা কোটা
যে সব জেলার মানুষের চাকরির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ওই সব জেলার মানুষ দের অগ্রগতির কথা বিবেচনা করে এই কোটা ব্যবস্থা করা হয়। এতে সকল জেলার সমান ভাবে অগ্রগতি হবে বলেন ধারণা করা হয়। আর তাই
জেলা অগ্রাধিকার কোটা – ১০ শতাংশ রাখা হয়।
BCS এ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা
প্রায় সকল ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী লোক-জন অনেক পিছিয়ে সকলের চেয়ে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী জীবন মান উন্নয়ন এবং তাদের অগ্রগতির কথা বিবেচনা করে রাখা হয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অগ্রগতি কোটা – ৫ শতাংশ।
BCS এ প্রতিবন্ধী কোটা
প্রতিবন্ধী হলেও তারা দেশের নাগরিক। নাগরিক হিসাবে দেশের সকল মৌকিক অধিকার পাবার অধিকার সবার আছে। আর প্রতিবন্ধী হিসাবে যাতে তারাও তাদের জীবন মান উন্নয়ন এবং সকল জনতার সাথে তাদের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী অগ্রাধিকার কোটা – ১ শতাংশ।
সকল কোটা একত্রে করলে হয় ৫৬ শতাংশ তার মনে সরকারি কোন চাকরির যদি ১০০ টি আসন থাকে তাইলে কোটা ভিত্তিক কোটা ধারীরা পাবে ৫৬ জন বাকি (১০০-৫৬=৪৪) ৪৪ জন আমজনতা (সাধারণ জনগণ)।
কোটা ব্যবস্থার সরকারি চাকরি প্রথম অবস্থায় এমন ছিলো, যদি কোন কোটায় প্রাথী না পাওয়া যেতো তখন ওই জায়গা ফাঁকা থাকত। কিন্তু এখন তা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন যদি কোন কোটায় প্রার্থী না পাওয়া যায় তাইলে মেধাতালিকা থেকে তা পূরণ করা হয়।
কোটা আন্দোলন
কোটা আন্দোলন কেন হচ্ছে?
সরকারি নিয়োগ পদ্ধতিতে কোটা বৈষম্য নিয়ে ২০১৮ সালে আন্দোলন হয়। যার ফলে ওই বছর কোটা পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। পরিবর্তন তা ছিলো এমন, ১৩ তম গ্রেডের (১ম এবং ২য় শ্রেণি) সরকারি চাকরির কোটা বাতিল করা হয় কিন্তু ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণিতে কোটা বহাল থাকে। যার সূত্র ধরে সেই পরিপত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন ২০২১ সালে। সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করে আদালত, যা এখনো বহাল রয়েছে।
যার ফলে ২০২৪ সালের ১লা জুলাই হতে লাগাতার কোটা আন্দোলন বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। কোটা আন্দোলন বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রদান দাবি হলো কোটা বাতিল বা সঠিক সংস্করণ। এই কোটা বাতিল আন্দোলন এ থাকবেন না কোন বৈষম্য কোটা। হোক সেটা মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পোষ্য কোটা, নারী কোটা বা জেলা কোটা। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অগ্রগতির কথা বিবেচনা করে থাকতে পরে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা। এই কোটা আন্দোলন বা কোটা বাতিল আন্দোলন ১লা জুলাই হতে এখন পর্যন্ত বহাল আছে।
কোটা আন্দোলন বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (কোটা বাতিল আন্দোলন) নেতাকর্মীরা আন্দোলন করছেন কোন কোটা বৈষম্য থাকবেন না এবং কোটার সঠিক সংস্করণ করতে হবে। এই দাবি জন্য ১০ জুলাই সারা দেশ “বাংলা ব্লকেড” পালন করেন। ১১ জুলাই পর্যন্ত কোটা বাতিল আন্দোলন এবং বাংলা ব্লকেড অবেহত আছে।
বাংলা ব্লকেড কী
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর বাংলা ব্লকেড বলতে বুঝাচ্ছেন ঢাকা সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মহাসড়ক গুলোর পুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা থাকবে এবং রাস্তা বন্দ বা অচল থাকবে বা অবরোধ থাকবে। মেইন রোড তো গাড়ি চলবেই না যদি বাইপাস রোড গাড়ি চলতে চাই তাও বন্দ করা হবে, কোন যানবাহন চলবে না ইতাদি।
আপডেট সকল খবরাখবর পেতে BCS Prepare এর ছোট সংবাদে ক্লিক করুণ।
Pingback: কোটা আন্দোলন আপডেট: থাকছে না সরকারি চাকরিতে কোটা ! - BCS Preparation
Pingback: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং উপদেষ্টাদের দপ্তর বণ্টন - BCS Preparation