কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

কর্ণফুলী টানেল

কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বাংলাদেশের বড় অর্জনের মধ্যে কর্ণফুলী-টানেল অন্যতম। বাংলাদেশের প্রথম নদীর নীচ দিয়ে টানেল এই কর্ণফুলী-টানেল। এই কর্ণফুলী-টানেলের আনুষ্ঠানিক নাম হলো “বঙ্গবন্ধু টানেল”। যা নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে। এই কর্ণফুলী-টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রাম শহরকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার সাথে সু-সংযুক্ত করছে এবং প্রসারিত করেছে। এই বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের অর্থনৈতিক ও পরিবহন খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। BCS Preparation এর এ পর্বে থাকছে কর্ণফুলী-টানেল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান। 

কর্ণফুলী টানেল কোথায় অবস্থিত?

কর্ণফুলী-টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেলটি অবস্থিত চট্টগ্রাম পর্বত জেলার কর্ণফুলী নদীর নিচে। এই টানেলের উত্তরে অবস্থিত পতেঙ্গা উপজেলা এবং দক্ষিণে অবস্থিত আনোয়ারা উপজেলা (কর্ণফুলী-টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা উপজেলাকে) মিলিত করেছেন।

কর্ণফুলী-টানেলের দৈর্ঘ্য কত?

বঙ্গবন্ধু টানেলের দৈর্ঘ্য কত?

কর্ণফুলী-টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেলের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৯.৩কিলোমিটার। এবং মূল কাঠামো বা নদীর নিচের টানেলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার। 

কর্ণফুলী টানেলের প্রস্থ কত?

বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রস্থ কত?

কর্ণফুলী-টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রস্থ ১০.৮ মিটার বা ৩৫ ফুট। বাংলাদেশের এই ৩৫ ফুট প্রস্থের টানেল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে নির্মিত।

কর্ণফুলী টানেলের উচ্চতা কত?

বাংলাদেশের প্রথম টানেল হলো কর্ণফুলী-টানেল এই কর্ণফুলী টানেল সু-উচ্চতা বিশিষ্ট কিন্তু এটা নির্মিত নদীর নিচে। এর উচ্চতা হলো ১৪.৫ মিটার যা ফুটে চিন্তা করলে আসে ৪৭ ফুট। 

কর্ণফুলী টানেলের ডিজাইন

কর্ণফুলী-টানেল একটি টুইন টিউব টানেল সিস্টেম। আমরা জানি টুইন অর্থ জোড়া ভা একত্রে ২টি। এখানে কর্ণফুলী নদীর নিচে একত্রে দুইটি টানেল করা আছে। এবং প্রতিটি টিউবে আছে যানবাহন যাতায়াতে জন্য দুইটি লেন। এবং কর্ণফুলী-টানেলের লেন সংখ্যা চারটি।

কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং কর্ণফুলী-টানেলের প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ১৪ই অক্টোবর ২০১৬ সালে। যার প্রেক্ষিতে আজকের এই স্থাপনা।

কর্ণফুলী টানেলের উদ্ভোধন হয় কবে?

১৪ই অক্টোবর ২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং কর্ণফুলী-টানেলের প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এবং এর কাজ শুরু হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে এবং বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী-টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালে এবং ২৮ অক্টোবর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।

কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প ব্যয় কত?

প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল (প্রকল্প মোট ব্যয়) ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা প্রায়। ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা কর্ণফুলী টানেলের কাজ শেষ করতে পারেনি চীনা কোম্পানিটি যার ফলে ব্যয় বাড়ানো হয়। এবং ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা প্রায়।

 

টানেলের প্রতিদিন কত যানবাহন চলে?

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী কর্ণফুলী-টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০০+ যানবাহন চলাচল করছে।

কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণে কোন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে?

এই টানেল নির্মাণে চীনা কোম্পানি যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন তা হলো ডাবল শেল ড্রিলিং

 

কর্ণফুলী-টানেলের সুফল

অর্থনৈতিক দিক চিন্তা করলে 

এই টানেলটি শুধু মাত্র যে উত্তরে পতেঙ্গা উপজেলা এবং দক্ষিণে অবস্থিত আনোয়ারা উপজেলা মিলিত করেছেন তাই নয় এই দুই প্রান্তকে অর্থনৈতিক ভাবে চাঙ্গা করেছেন। এবং এর মাধমে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম দ্রুততর করবে এবং অঞ্চলটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে সকল অর্থনীতিবিদের ধারণা।

অন্যদিক থেকে যদি চিন্তা করি তাইলে বলা যায় পর্যটন বৃদ্ধির কথা।

পর্যটন বান্ধব 

কর্ণফুলী-টানেলের মাধমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং আরও সহজ হবে, যা পর্যটনের উন্নয়নে ব্যাপক সহায়ক হবে। সেই সাথে পর্যটক আনাগোনা বাড়বে। এবং এই টানেলের মাধমে অঞ্চলিক সংযোগ সৃষ্টি হবে। যার ফলে চট্টগ্রাম শহরের ট্রাফিক জ্যাম কমাতে সহায়তা করবে এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও অন্যান্য অঞ্চলের সাথে আরও সু-প্রসারিত সংযোগ স্থাপন করবে।

কর্ণফুলী-টানেল নির্মাণ করেন কোন কোম্পানি?

বাংলাদেশের প্রথম এবং বৃহতর কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ কাজ করেন চীনের বৃহত্তম এবং সুনাম ধন্য কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশনএবং কর্ণফুলী টানেল এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সাথেই পাঁচ বছরের চুক্তি করেছেন।

টানেলের ভেতরের নিরাপত্তা এবং বায়ু চলাচল ব্যবস্থা?

কর্ণফুলী-টানেল এর ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং বায়ু চলাচল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এবং কর্ণফুলী-টানেল কে ভূমিকম্প সহনশীল ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এবং পর্যাপ্ত আলো প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায় কর্ণফুলী-টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান টানেল বাংলাদেশের এক সাফল্যের নাম। যার মাধমে দেশের অর্থনৈতিক, পর্যটক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ নানান দিক অগ্রসর হবে। 

BCS Prepare এর সাথে আরও পড়ুন ঢাকা মেট্রোরেল সম্পর্কে যাবতীয় প্রশ্ন এবং সমাধান পর্বে ঢাকা মেট্রোরেল এ 

Leave a Reply